প্রকাশিত: Tue, Jun 25, 2024 1:30 PM
আপডেট: Fri, May 9, 2025 12:06 PM

[১]ফারাক্কা তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনও চুক্তি নয়, প্রধানমন্ত্রী মোদিকে মমতার চিঠি

ইকবাল খান: [২] ২২ জুন শনিবার দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের পরেই আপত্তি তোলা হয়েছিল তৃণমূলের তরফে। সূত্র: আনন্দবাজার, এনডিটিভি 

[৩] সোমবার পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে ‘ফারাক্কা-গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি’ নবায়ন এবং তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। লিখেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অংশগ্রহণ ছাড়া তিস্তা এবং ফারাক্কার পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনও রকম চুক্তিতে আমার তীব্র আপত্তি রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্বার্থ নিয়ে কোনও আপস করব না।’’

[৪] চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘‘গঙ্গা এবং তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে হয়ত আপনার কিছু আলোচনা হয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের কোনও মতামত না নিয়ে এমন একতরফা আলোচনা কাঙ্খিত বা গ্রহণযোগ্য নয়।’’ 

[৫] বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণের সঙ্গে যে তিনি সুসম্পর্ক রাখতে চান, সেই বিষয়ে মমতা বলেছেন, ছিটমহল বিনিময়, রেল ও বাস যোগাযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিবিড় হয়েছে।

[৬] কিন্তু এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘কিন্তু পানি অত্যন্ত মূল্যবান। প্রাণধারণের রসদ নিয়ে কোনও সমঝোতা করতে আমরা প্রস্তুত নই।’’ পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে পানিবণ্টনের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বলেও বর্ণনা করেন তিনি। 

[৭] বস্তুত, সোমবার বিকেলে পশ্চিম বঙ্গ সচিবালয় সাংবাদিক বৈঠকে পানিবণ্টন নিয়ে নয়াদিল্লি-ঢাকা দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা। সেই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, ‘‘চীনকে দিয়ে ড্যাম (জলাধার) বানিয়েছে বাংলাদেশ।’’

[৮] প্রসঙ্গত, গঙ্গার জল বণ্টন নিয়ে ১৯৯৬ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালে। 

[৯] এর মধ্যে শনিবার নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনার মধ্যে একটি বৈঠক হয়। সেখানে ‘ফারাক্কা-গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি’ নবায়নের জন্য ‘যৌথ কারিগরি কমিটি’ তৈরি করা হয়েছে। কার্যত এই পদক্ষেপের মাধ্যমে দু’দেশ পানি বণ্টন চুক্তি নবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হল। 

[১০] রোববারই তৃণমূলের তরফে মোদি সরকারের ওই পদক্ষেপের সমালোচনা করা হয়েছিল।

[১১] নরেন্দ্র মোদিকে পাঠানো চিঠিতে মমতা লিখেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের জনজীবনে গঙ্গার পানি গুরুত্বের পাশাপাশি ফারাক্কা থেকে পাওয়া পানি কলকাতা বন্দরের নাব্য বজায় রাখার ক্ষেত্রেও বড় ভরসা।’’ সেই সঙ্গে চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘‘ফারাক্কা ফিডার ক্যানালের মাধ্যমে অন্তত ৪০ হাজার কিউসেক পানি পেলে কলকাতা বন্দরের নাব্য বজায় রাখা সম্ভব।’’ তা না হলে গঙ্গায় পলি পড়ে কলকাতা বন্দর জাহাজ চলাচলের উপযোগী নাব্য হারাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

[১২] প্রায় আট বছর আগে ফারাক্কা ব্যারেজ থেকে ঠিক ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে পাংশায় পদ্মা নদীর উপর হাসিনা সরকার বাঁধ নির্মাণে উদ্যোগী হওয়ায় আপত্তি তুলেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। দু’দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত জলঙ্গি এবং মাথাভাঙা নদী ইতিমধ্যেই পদ্মার সঙ্গে সংযোগ হারিয়ে ফেলেছে বলে চিঠিতে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি লিখেছেন, ‘‘এর ফলে সুন্দরবনে মিষ্টি জলের প্রবাহ ব্যাহত হয়েছে।’’

[১৩] প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে তিস্তার পানিবণ্টন প্রসঙ্গেরও উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘‘সিকিমে পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে তিস্তার গুরুতর স্বাস্থ্যহানি হয়েছে। পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে।’’ এর পরেই কেন্দ্রকে নিশানা করে চিঠিতে তাঁর মন্তব্য, ‘‘দেখে আশ্চর্য হচ্ছি, তিস্তার ভারতীয় অংশের স্বাস্থ্য ফেরাতে মন্ত্রণালয়েরর কোনও উদ্যোগই নেই!’’ 

[১৪] সিকিমে পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে তিস্তায় পানিপ্রবাহ কমেছে এবং তাতে উত্তরবঙ্গের কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।